ছবি; অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া (গোল চিহ্নিত )
নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনের অবসান ঘটলেও গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে এখনো চলছে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার ফ্যাসিবাদী রাজত্ব। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে কোচিং ফিস,সার্টিফিকেট,প্রশংসাপত্র,নির্ধারিত টেইলার্স থেকে বাধ্যতামূলক কলেজ ড্রেস কেনা ইত্যাদির নামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় ।
বিধিবহির্ভূতভাবে কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের স্বাক্ষর ছাড়াই স্কুলের দোকান ও স্কুলের পশ্চিম পাশের জমি বিক্রি, নিয়োগ বাণিজ্য, বিনা টেন্ডারে মনগড়া ভাউচার বাণিজ্যসহ অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্বেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন।
আলাউদ্দিনের এহেন কর্মকাণ্ডের পরও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় মব জাস্টিসের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটতে পারে।
জানা যায়,সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং তার স্ত্রীর প্রিয়ভাজন হওয়ায় গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য থাকা অবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিনি অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মাহবুবুল আলম (মুদাফা),কামাল হোসেন, আমজাদ হোসেন,আবু জাফর আহমেদ,সজীবসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু শিক্ষককে সমন্বয়কারী, শিক্ষক প্রতিনিধি, শৃংখলা কমিটির নামে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন যেনো প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষক বা আউচপাড়া তথা টঙ্গীর কেউ যেনো তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে না পারেন। আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক যেন মুখ খুলতে সাহস না পায় সেজন্য শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে মানসিক চাপে রাখতেন।
গত ১৩/৫/২৪ইং তারিখ আলাউদ্দিন এর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ মেসঞ্জারে দেখে পড়া এবং অন্য কয়েকজন শিক্ষককে সেন্ট করার অভিযোগে মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ও প্রভাষক কামাল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষককে শোকজ করেন যার স্বারক নং ৪৬০/১ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৫-৮ বিষয়ে ফেল করিয়ে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা আদায় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অনেক শিক্ষার্থী।
এদিকে নয়া দিগন্তসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আলাউদ্দিনের ( আলাউদ্দিনের চেরাগ ) অনিয়ম দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হওয়ায় আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি । সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বেফাঁস মন্তব্যসহ মামলা করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি । আওয়ামী শাসনামলে নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতির ও সংবাদকর্মীর সঙ্গে খারাপ আচরণ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত জানতে,অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি ।
সার্বিক বিষয় জানতে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা (এডিসি )কে ফোন দিলে তিনিও ফোন ধরেননি । জেলা প্রশাসকের ( সিএ )গোলাম রসুল এ প্রতিবেদককে জানান,সরকারী ছুটির কারনে স্যার অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন । অফিস চলাকালিন সময়ে যোগাযোগ করবেন ।
স্কুল মাঠের দক্ষিণ পাশে ১৭টি দোকান, টঙ্গী সরকারি কলেজ সংলগ্ন জরাজীর্ণ একতলা মার্কেটে সিটি কর্পোরেশনের নিষেধ অমান্য করে ২১টি দোকান নির্মাণ করে প্রতিটি দোকান বিক্রি করেছেন ৩২-৩৫,০০,০০০ (পয়ত্রিশ লক্ষ) টাকা।
বিক্রয়মূল্য কম দেখানোর জন্য টঙ্গী পাইলট স্কুল মার্কেটের ইসলামিয়া লাইব্রেরীর মালিক দেলোয়ার হোসেনের নামে প্রায় পনেরটি দোকান ১০-১৫,০০,০০০ (পনেরো লক্ষ )টাকা করে বিক্রয়মূল্য দেখিয়ে অত:পর দেলোয়ার হোসেনকে দিয়ে প্রায় তিন গুন দামে বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন । শুধু তাই নয়,আমিন ফার্মার মালিক আমিনুল ইসলাম, তার সহোদর ভাই আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, তার শালিকা সেলিনা-উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান মোড়লের নামে প্রায় ২০টি দোকান প্রথমে কম মূল্যে দলিল করে পরবর্তীতে তিন থেকে চারগুণ দামে বিক্রি করেছেন অথচ বিক্রিত মূল্যের এক তৃতীয়াংশ টাকাও স্কুল ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
এখানেই শেষ নয়,সর্বশেষ একটি দোকান আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক প্রতিনিধি আবু জাফর আহমেদকে তিন লক্ষ টাকায় দলিল করে দিয়েছেন যা আবু জাফর ৩৩,০০,০০০ (তেত্রিশ লক্ষ ) টাকায় বিক্রি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আউচপাড়া নিবাসী অনেকেই বলেন,শুধু অর্থ কেলেঙ্কারি নয় আরও অনেক অপকর্মের সাথেই অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন জড়িত । শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার বিশিষ্টজনদের দাবী আওয়ামী লীগের দোসর অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তার সকল অপকর্মের বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হউক এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সম্পদের বিক্রীত সকল অর্থ প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে দিয়ে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজকে রাহু মুক্ত করা হউক।
পর্ব-১